Noor​ani Islamic Cultural Centre

কুরআন মজিদ: আল্লাহর অবতারিত সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ

প্রস্তাবনা: কুরআন মজিদ ইসলাম ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ, যা আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর মাধ্যমে মানবজাতির জন্য অবতীর্ণ করেছেন। কুরআন মজিদ শুধু ধর্মীয় শিক্ষা নয়, এটি মানব জীবনকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধি। এর মধ্যে রয়েছে নৈতিকতা, আধ্যাত্মিকতা, সমাজ ব্যবস্থাপনা এবং পরকালীন জীবন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।

কুরআনের ইতিহাস: কুরআন মজিদ অবতীর্ণ হতে শুরু করে ৬১০ খ্রিস্টাব্দে, যখন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) প্রথম বার্তা পান হিরা গুহায়। কুরআনের অবতরণ ২৩ বছর ধরে চলেছিল। আল্লাহর প্রেরিত শব্দগুলো বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে নাজিল হয়েছিল, যা পরে একত্রিত হয়ে আজকের কুরআন মজিদে পরিণত হয়। কুরআনের প্রতিটি আয়াত বা সূরা মানব জাতির জন্য নৈতিক, আধ্যাত্মিক, সামাজিক এবং পার্থিব জীবনের দিকনির্দেশনা দেয়।

কুরআনের বিশেষত্ব: ১. লেখা ও সংরক্ষণ: কুরআন মজিদ পৃথিবীর একমাত্র ধর্মীয় গ্রন্থ যা সম্পূর্ণভাবে উহূরিভাবে (মৌখিকভাবে) সংরক্ষিত হয়েছে। এটি একটি জীবন্ত মিরাকেল, কারণ আজ পর্যন্ত কুরআনের কোনো এক অক্ষরও পরিবর্তিত হয়নি। ২. ভাষা ও শৈলী: কুরআন মজিদের ভাষা অত্যন্ত সুন্দর, বর্ণনায় পুঙ্খানুপুঙ্খ এবং মিথ্যা কিছু নেই। এর শৈলী এমন যে, এটি একসাথে সহজবোধ্য এবং গভীর। ৩. পবিত্রতা: কুরআন মজিদ পৃথিবীজুড়ে বিভিন্ন সংস্কৃতিতে বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে, তবে আরবি কুরআন মজিদের পূর্ণতা এবং যথার্থতা সবার জন্য অপরিহার্য।

কুরআনের নৈতিক শিক্ষা: কুরআন মজিদে প্রতিটি মানুষের জন্য স্পষ্ট নৈতিক নির্দেশনা রয়েছে। ইসলামের মূল নৈতিকতা কুরআনেই এসেছে:

  • অথচ দয়া: কুরআনে বলা হয়েছে, “আর আল্লাহ তাআলা দয়ালু, ক্ষমাশীল, এবং পরিপূর্ণ ক্ষমা প্রদর্শনকারী।”
  • সত্য ও মিথ্যা: কুরআনে মিথ্যা বলার কঠোর প্রতিবাদ করা হয়েছে। এটি বলা হয়েছে, “তোমরা সত্যের অনুসরণ করবে, মিথ্যা পরিত্যাগ করবে।”
  • অন্যায় ও ন্যায়: কুরআনে বিভিন্ন জায়গায় অন্যায়ের বিরুদ্ধে কঠোর কথা বলা হয়েছে এবং ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।

কুরআনের আধ্যাত্মিক শিক্ষা: কুরআন মানুষের আধ্যাত্মিক জীবনের পথপ্রদর্শক। এটি মানুষের অন্তরে শান্তি, প্রশান্তি, এবং আল্লাহর প্রতি গভীর ভালোবাসা সৃষ্টির পথ দেখায়। কুরআন মজিদে আল্লাহর একত্বের দিকে মনোযোগ আকর্ষণ করা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে: “তোমরা আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করো না।” এর মাধ্যমে মানুষের আধ্যাত্মিক উন্নতি অর্জন সম্ভব।

কুরআনের সমাজব্যবস্থা: কুরআন সামাজিক দায়িত্ব এবং মানবতার উন্নতি সম্পর্কেও বিস্তারিত নির্দেশনা প্রদান করেছে। এটি সমাজের প্রান্তিক জনগণের অধিকার নিশ্চিত করেছে। কুরআন মজিদে বারবার দান-দক্ষিণা, খাতির-এ-মিল্লাত, বিচার, সহানুভূতি এবং জনগণের অধিকার সংরক্ষণ করতে বলা হয়েছে।

উপসংহার: কুরআন মজিদ একটি জীবনবিধি, যা বিশ্বমানবতার কল্যাণের জন্য আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে পৃথিবীতে প্রেরিত হয়েছে। এটি ধর্মীয় চর্চা থেকে শুরু করে মানবতার সেবা, আধ্যাত্মিক উন্নতি এবং সামাজিক কল্যাণের পথপ্রদর্শক। কুরআন মজিদের শিক্ষাগুলি প্রতিটি মুসলিমের জীবনে মেনে চলা উচিত।